fbpx

পাওনা

শামীমা খন্দকার খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ওয়েল পেইন্টিং দেখছিলেন। এত মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন যে কখন মৃদুল এসে ড্রইং রুমে তার পেছনে দাঁড়িয়েছে টের পাননি।

একটু শব্দ করল মৃদুল। চমকে পেছনে তাকালেন শামীমা।

– তোমার আঁকা?

– জি।

অবিকল বাবার মত হয়েছে ছেলেটা। ভেতরটা কেমন করে উঠল শামীমা খন্দকারের। কিন্তু তিনি আবেগ লুকিয়ে রাখতে জানেন চমৎকারভাবে। ছেলেকে কিছুতেই ফোনে বুঝতে দেননি তিনি ছেলেকে দেখার জন্যই দেশে ছুটে এসেছেন। খুব ঠান্ডা গলায় বলেছিলেন, তোমার সঙ্গে মিট করা যাবে?

মৃদুল খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিয়েছিল, কেন নয়?

দুই মাস আগে,

একটা আন্তর্জাতিক তেল রঙে আঁকা ছবির প্রদর্শনীতে মৃদুলের দুটো ছবি সিলেক্ট হয়। সে যেতে চায়নি।রুমা ফুপি জোরজুলুম করে তাকে পাঠালেন আমেরিকা। মৃদুল বুঝতে শেখার পর সেখানেই মা ছেলের প্রথম দেখা। সাধারণত বাবা, মা আলাদা হয়ে গেলে সন্তান যার কাছে থাকে তার প্রতি আলাদা মমতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। মৃদুলেরও হয়ত তাই। কিন্তু সে কোন মান অভিমান প্রকাশ করেনি। কফির জন্য ডাকতেই সে রাজি ছিল। অবশ্য পরে ডিনারের জন্য অনেক অনুরোধ করলেও সে ডিনার করেনি। কিন্তু ওটুকু সময় ছেলের সান্নিধ্য তার মনের ভেতরের সুপ্ত মাতৃস্নেহ পুরোপুরি জাগিয়ে তুলেছিল। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিলেন না।  বারবার শুধু মৃদুলের কথাই মনে পড়ছিল। তাই উপায়ান্তর না দেখে দেশে ফিরে এলেন ছাব্বিশ বছর পর। নিজের কাছে অনেকটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন যে আর এমুখো হবেন না। কিন্তু মাতৃত্ব বোধ হয় সবকিছুর উপরে।

শামীমা খন্দকার  নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমেরিকা এলেও এখন নিজস্ব ব্যবসা করছেন। তার বুটিক হাউজ, সুপার শপ মিলিয়ে বেশ মোটা অংকের সম্পত্তি রয়েছে। তাই অহংবোধ স্বাভাবিক। কিন্তু মৃদুলের এত সাবলীল আচরণের পেছনে সম্ভবত একটাই কারণ সে শিল্পী। একটা ক্যানভাসকে যেমন রঙে রাঙিয়ে দেয় তেমনি নিজের অভিব্যক্তিও চমৎকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বেশ ভালো লাগে শামীমার। একটু গর্ব বোধ করে।

রুমা এসে ঢুকলেন রুমে।

– কিরে? একদম চুপচাপ? কেমন আছেন ভাবী? মানে..

– ঠিক আছে। তুমি ভাবী ডাকতে পার।

– ভালো আছি।

– একটু চা খাওয়াবে ফুপি? কণ্ঠে আবদার মৃদুলের।

– এই কয় কাপ হল রে? একটু ধমকে উঠে রান্নাঘরে গেলেন রুমা। থাক ওরা মা ছেলেতে একটু কথা বলুক।

মৃদুল খুব অস্বস্তি বোধ করছে। বাবা এই মহিলা সম্পর্কে খুব কম ধারণা দিয়েছেন। রুমা ফুপিও এই প্রসঙ্গে সচরাচর কথা বলে না। ফলে অনেক কিছুই তার অজানা। কী করেন? আবার বিয়ে করেছেন কিনা? ছেলে মেয়ে আছে কিনা? কেন এই বিচ্ছেদ? কিছুই জানেনা সে।

ছোটবেলায় প্রশ্ন করলে বাবার একটাই উত্তর ছিল, বড় হও। আর যখন বড় হল তখন বাবাই থাকলেন না। পাড়ি দিলেন অনন্তের পথে। উনার বাসায় গিয়েও কোন সদুত্তর মেলেনি। কেমন সব ধোঁয়াসা! ড্রয়িং রুমের দেয়ালে কোন পারিবারিক ছবিই ছিল না। ছিল কিছু টেরাকোটার পটে ছোট ছোট গাছ।

– এই ছবিই আঁকছ? নাকি অন্য কিছুও করো? নীরবতা ভাঙলেন শামীমা।

– বাবার সমস্ত ব্যবসা, ফুপির খামারবাড়ি সবই দেখি।

– বাহ!

– তোমাকে চারুকলাতে পড়তে বাঁধা দেননি তোমার বাবা?

– নাহ! তা কেন দেবেন?

– বাহ! এতদিনে এই মানুষটার বুদ্ধি হয়েছিল! মনে মনে বললেন শামীমা। অথচ তার বেলায় সবকিছুতেই উত্তর ছিল ‘না’!

– ব্যবসা দেখছ কতদিন?

– বাবার প্রথম হার্ট এটাক থেকেই।

– প্রথম? কেউ তাকে একটা বার কিছু বলেনি! শেষে শুধু মৃত্যুর খবর তাও ছোট্ট একটা ইমেইল করেছিল মৃদুল।  He is no more. অপরিচিত আইডি। খুব অবাক হয়েছিলেন শামীমা। খোঁজখবর করতেই জানতে পারলেন ওটা মৃদুলের আইডি। তার একমাত্র সন্তান মৃদুল! আর নেই হয়ে যাওয়া মানুষটা একদা তার স্বপ্ন পুরুষ ছিল। সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল।  তিন চার দিন কিছু মুখে দিতে পারেননি। মাস খানেক কেটেছিল ঘোরের ভেতর। তারপর একদিন রুমা ফোনে জানালো মৃদুল আমেরিকা যাচ্ছে। একটা ছবির প্রদর্শনীতে। রুমার সাথে মাঝে মাঝেই কথা হত। রুমাই চেয়েছিল বাবার মৃত্যুর পর মাকে যেন কাছে পায় মৃদুল। তাই ফোন করে দর্শক হিসেবে  পরিচিত হতে বলেছিলেন শামীমাকে। ফুপির এই নাটক মৃদুলের হয়ত ধরতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু এটুকু নাটক মনে হয় দরকার ছিল।

– আবার তোমরা কোথায় হারালে? রুমা ট্রে হাতে রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে বললেন, এই নে তোর চা! সারাদিন এই চা গিলে নিয়ে এক চামচ ভাত খাওয়া।  মানুষ না যেন পাখি!

– উফ! ফুপি পাখি কি চা খায়?

–  চেষ্টা করে দেখিস তোর টিয়াপাখি চা খেতেও পারে।

কী সহজ সুন্দর সম্পর্ক এদের শামীমা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন। মৃদুল তার সামনে অদ্ভুত মুখোশ পরে বসে থাকে।

চা শেষ করে শামীমা বললেন,

– আজ উঠি তাহলে।

– না না! কোনভাবেই না! পাবদা, ইলিশ, চিংড়ির মালাইকারি রান্না করেছি। ওটা তোমাকে খেয়ে যেতেই হবে। রুমা বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন।

– সে আরেকদিন হবে।

– না! এই মাছ রোজ পাবে নাকি?

মৃদুলের মুখে কুলুপ। একবারও কিছু বলল না।  ভীষণ অভিমান নিয়ে উঠতে গিয়ে শামীমা ভাবলেন কী অধিকার আছে তার অভিমানের? অগত্যা মাছের অজুহাতে ছেলেকে আরেকটু কাছে পাওয়া।

খাবার টেবিলেও টুকটাক খুনসুটি ফুপু ভাইপোর ভাত কম খাওয়া নিয়ে। রুমা যেভাবে বলে তেমন অল্প খায় না অবশ্য মৃদুল। খেয়েই উঠে চলে গেল পাখিদের খাওয়ার সময় হয়েছে বলে। আসলে দম আটকে আসছিল তার। বারবার বাবার কথা মনে পড়ছিল। কতটা কষ্ট নিয়ে গেছেন মানুষটা।  এখন, এতদিন পর কী চায় এই মহিলা? কোন পাখিকে কী খাওয়াতে হবে সব উল্টে পাল্টে গেছে। খাবারের বাটিগুলো বের করে পরিষ্কার করে আবার ভরে দিল।

দশদিন কিভাবে কেটে গেল শামীমা নিজেও জানেন না। বাবার বাড়ি, ভাই বোনদের সাথে এত বছর পর দেখা। আজ হোটেলের কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁতে ডেকেছেন মৃদুলকে। সে অবশ্য বাসাতেই যেতে বলছিল। কিন্তু তাতে কোন প্রাণ ছিল না। স্যুটকেস ঘেটে চওড়া মেজেন্ডা পাড়ের কালো শাড়ি পরলেন। সাথে ম্যাচিং কানের দুল, চুড়ি, হাত ব্যাগ। সব সময় এভাবেই পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে বের হন তিনি।

এমনই একদিন পরিপাটি হয়ে জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন আজ থেকে আটাশ বছর আগে। চাকরিটা না হলেও প্রথম দেখা হয় মৃদুলের বাবার সাথে। তিনি তখন ঐ অফিসের নতুন বস। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বিশাল ব্যবসা। শিক্ষাগত যোগ্যতা সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু টাইপ রাইটারে টাইপ করতে জানতেন না শামীমা। চাকরিটা সে জন্যই হয়নি। কিন্তু তিনি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন এক সপ্তাহের মধ্যেই শিখে নেবেন। চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট হল। খুব ভালো না শিখলেও মোটামুটি কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত শিখে গেছেন শামীমা। চাকরিটা হল। ছয় মাস পরেই জানতে পারলেন চাকরিটা নেই! খুব রাগত ভঙ্গিতে বসের রুমে যেতেই একটা গোলাপ ফুল ধরিয়ে দিয়ে বস বললেন,

– এই চাকরির বদলে অন্য একটা চাকরি দিতে চাই! করবেন?

পরের মাসেই ধুমধাম করে বিয়ে হল। যদিও মৃদুলের দাদা, দাদী কারো মত ছিল না। কিন্তু ছেলের সুখের কথা ভেবে তারা রাজি হলেন।

বিয়ের পর দুটো বছর পাখির ডানায় ভেসে চলে গেল। স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অফিস সামলাতেন। অফিস ট্যুরে প্রায় সারাদেশে বেড়িয়েছেন। ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে তরতরিয়ে। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু ধাক্কা খেতে হল। আমেরিকাতে অফিস ট্যুরের দুদিন আগে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাড়িতেই ডাক্তার এসে দেখে গেলেন। কিছু পরীক্ষা করে চেম্বারে দেখা করতে বললেন। চেম্বারে রিপোর্টসহ গিয়ে জানা গেল তিনি সন্তানসম্ভবা। পুরো পরিবার খুশিতে পাগলপ্রায়। শাশুড়ি সবসময় চোখে চোখে রাখেন। খাবার, চলাফেরা সব তদারকি করেন। তখন থেকেই অফিস যাওয়া বন্ধ। বাড়িতে দম আটকে আসত। অফিসের সারাদিনের ব্যস্ততার পর মৃদুলের বাবা যেন কেমন দূরে সরে যেতে লাগল। আর একসাথে কাজ, আড্ডা, ঘোরাফেরা হয় না। যদিও নয়টা মাস। তারপর তো মুক্তি! কিন্তু না! ছেলে জন্মানোর পরও মুক্তি মিলল না।  বরং আরো আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়লেন। নবজাতক সন্তান একদিকে, আরেকদিকে তার স্বপ্ন স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার। কিন্তু একদিন বলতেই অপমান করে দিল মৃদুলের বাবা। মেয়েদের আসল পরিচয় নাকি মাতৃত্বে! আসলেই কি তাই? ঝগড়া, খুনসুটি লেগেই রইল। চোখের বালি হয়ে উঠল সন্তান!

হঠাৎ ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলেন শামীমা। মৃদুলের ফোন। ওহ! কিসব ভাবছি! দ্রুত পা চালিয়ে রেস্তোরাঁতে পৌঁছালেন।

– খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। শামীমা ছেলেকে প্রশ্ন করলেন।

– হুম, একটু ক্লান্ত।

– কী হয়েছে?

– না, তেমন কিছু না! অফিসে যা হয় আর কি!

– ঐ অফিসে আমিও কাজ করেছি।

– আমি জানি।

– আমাকে শেয়ার করতে পার।

– আসলে তেমন কোন সমস্যা নেই।  নিজের শখ আর পেশা সামলাতেই কাহিল।

শামীমা বুঝলেন মৃদুল তাকে কিছুই বলবে না।

– বিয়ে করছ না কেন?

– হঠাৎ এই প্রশ্ন?

– তাহলে তোমার স্ত্রী তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।

– এত সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার।

– এই তো সেই একই ভুল!

– কীরকম?

– তোমার বাবা যে ভুল করেছিল।

– কী ভুল?

– আমাকে কখনোই আমার যোগ্যতা অনুযায়ী মর্যাদা দেয়নি।

– আপনি দিয়েছেন?

– কী?

– আমার প্রাপ্য ভালোবাসা?

চামচটা হাত থেকে পড়ে গেল শামীমার। ওয়েটার এসে দ্রুত চামচ দিয়ে গেল। কিন্তু খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে তার।

বিদায় নেওয়ার সময়ও কিছু বলল না মৃদুল। ভালো থাকবেন বলে চলে গেল। কখন ফ্লাইট কিছুই জানতে চাইল না।

রুমে ফিরে ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লেন শামীমা। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। এতদিন তিনি জেনে এসেছেন তার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তিনি। তার যোগ্যতা সম্পূর্ণ ভিন দেশে গিয়ে প্রমাণ করেছেন। আজ ফিরব, কাল ফিরব করতে করতে এতগুলো বছর কেটে গেছে। সফলতার শিখরে ওঠার অদম্য বাসনা তাকে ধীরে ধীরে সব ভুলিয়ে দিল। কিন্তু ছেলের সামনে যে দম্ভ নিয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তা তো হলো না।

এই প্রথম মনে হল, ভুলটা কি তবে তার ছিল? স্বামী, সন্তান ত্যাগ করে নিজের আত্ম পরিচয় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা? আসলেই তো বঞ্চিত হয়েছে মৃদুল। মা জীবিত থাকতেই মাকে হারিয়েছে সে। অথচ শামীমা কি পারতেন না ছেলে একটু বড় হলে আবার অফিসে যেতে? স্বামীর সাথে করা অভিমান আহত করেছে ছেলেকে।

অভিজাত নার্সিংহোমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মৃদুল। হোটেল থেকে ফোন এসেছিল রাত বারোটায়। মিসেস খন্দকার দরজা খুলছেন না। হোটেল কতৃপক্ষ এক্সট্রা চাবি দিয়ে রুম খুলে দেখে ভদ্রমহিলা অজ্ঞান।রেজিস্টারে মৃদুলের নম্বর ছিল। তাই ও কে ফোন করে জানানো হয়েছে। মৃদুল সাথে সাথে হোটেলে গিয়ে শামীমাকে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে।

সিস্টার জানালেন রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি তাকেই খুঁজছেন।

চেয়ার টেনে শামীমার বেডের পাশে বসল মৃদুল। ছেলের দুহাত চেপে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন মা। মৃদুল বাহিরে তাকিয়ে আছে।

– আহ! প্লিজ কাঁদবেন না। ডাক্তার কেবিনে ঢুকেই বললেন। আবার কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে। সাবধানে রাখবেন আপনার মাকে। মৃদুল কোন জবাব দিল না। ও যেন একটা পাথর।

– তুমি কি কিছুই বলবে না?

– আমি কী বলব? আমার কি আসলেই কোন ভূমিকা আছে?

– মানে?

– শুনেছি অনেক ভঙ্গুর পরিবারে সন্তান এলে সেই পরিবার আবার জোড়া লাগে। অথচ বুঝতে শেখার পর থেকে শুনে আসছি আমিই তোমাদের আলাদা হওয়ার কারণ। দুজনের কেউই আর বিয়ে করলে না। কিন্তু আবার একসাথে বসবাসের চিন্তাও করলে না। আমার জন্যও পারতে না? একটু আত্মত্যাগ করতে?

– তোর বাবা একবারও তো ডাকল না?

– তুমি ডেকেছিলে বাবাকে? আমাকে দেখতেও চাওনি কোনদিন। কী অদ্ভুত অবহেলা করে গেছ সারাজীবন। দুজনেই দুজনের মাঝে দেয়াল বানিয়েছিলে আমাকে।  অথচ আমি হতে পারতাম সেতু।

মৃদুল প্লিজ ভাবীকে একটু রেস্ট নিতে দে। রুমা ঢুকে বললেন।

– না বলতে দাও ওকে। ওর মনের সব জ্বালা জুড়িয়ে যাক।

এ জ্বালা জুড়োবার নয় বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল মৃদুল।

তিনবছর পর আবারও সেই হাসপাতালের কেবিনে মা ছেলের দেখা। এবারের কারণটা ভিন্ন। মৃদুলের  একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।

দাদী এবার সবকিছু থেকে অবসর নিয়ে নাতনি মানুষ করবেন। সদ্যজাত মেয়েকে নিজের গলার চেন খুলে দিলেন শামীমা। মৃদুলের স্ত্রী আপত্তি করলেও মৃদুল বলল, দিতে দাও। সব পাওনা আমার মেয়েই আদায় করে নেবে।