fbpx

শীতের খোঁজে

বছর ঘুরে এবারও নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশে শীতের আগমন ঘটছে। তবে বরাবরের মতোই শীতের আগমনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনার দিনক্ষন নিয়ে জনমানুষের মনে দ্বিধা দেখা যাচ্ছিলো। কেউ কেউ শীতের আগমনী লক্ষণের বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে গরম গরম পোস্ট দিয়ে স্পেশাল রেসিপি এখন ট্রেন্ডিংয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আমরা সরেজমিন অবস্থা পরিদর্শনের জন্য ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের অভিমত সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। 

শীতের আগমনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সজাগ থাকে ঢাকার হকাররা। তারা যেন এক প্রকার জোর করেই শীত নামিয়ে ফেলতে চায়। শীতের কাপড়, হুডি, মোজা, মাফলার, শীতটুপি, মেরিল, ভেসলিন, লোশন ইত্যাদি সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে একটা ঘ্যাঁতঘেতে অবস্থা জুড়ে দেয়। ঘ্যাঁতঘেতে হলো গরমের মাঝে অল্প একটু শীত ঢেলে, না শীত না গরম অবস্থা তৈরি করা— স্যাঁতসেঁতের শীতকালীন ভার্সন। আজও আমরা ঘুরে ঘুরে হকারদের শীতের এমন বিশাল আয়োজন দেখেছি। গুলিস্তানের একজন “দেইখ্যা লন, বাইচ্যা লন” ক্যাটাগরির হকারকে শীত আসছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “ভাই, কাস্টমারগো শইল্লেত্তে এখন পঁচা গন্ধ আহে, শীত আইছে ধইরা অরা মনে অয় গোসল করা বন্ধ কইরা দিছে। ভাই ব্যবসা পাল্ডান লাগবো। মরসুম পাল্ডাইছে তো”। মৌসুমের সাথে ব্যবসা পাল্টানোর বিশেষ কি উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মোডা কাফর বেচুম, হেগো শইল্লের গন্ধ আটকান লাগব না? হে হে হে!”

এদিকে হাইকোর্ট এলাকায় একজন ১৭০ কেজি ভরের এক ভদ্রলোক চেতনা বিসর্জন দিয়ে অচেতন হয়ে ভূমির সাথে ফিট হয়ে আছেন। জড়ো হওয়া লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে কুয়াশাময় আকাশ দেখে শীত নিশ্চিত হবার জন্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল্কা বৃষ্টি (নভেম্বর রেইন) দেখে তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। তার চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি বিজ্ঞান কলেজের চেতনা পরিষদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

গতকাল রাত ১২টার দিকে সহকর্মী রবিন জমাদার (সংগৃহীত খবরগুলো জমা করে রাখে) কে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে যাই। সেখানে শিক্ষার্থী ও সাধারন জনগন শীতের আগমনকে উপলক্ষ করে বাহারি গল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। শীতকে বরণ করতে একটি ‘শীতবরণ’ অনুষ্ঠান আয়োজন করার ব্যাপারে কয়েকজন আলোচনা করছিলেন। শীতবরণ পরিষদের মূখপাত্র জনাব তৌফিক বিন রফিক বলেন, “শীতকে বরণ করতে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আগামী ১৮ নভেম্বর আমরা দিনব্যাপী নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে মহামান্য শীত ঋতুকে বরণ করে নেব”। শীতবরণকে সামনে রেখে কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে পরিষদটি। তাদের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে—

সকালে টিএসসিতে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন পোহানো। দুপুরে শাহবাগে এত বছর শীতকে উপেক্ষা করে শীতবরণ না করায় গনক্ষমা চাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। বিকেলে জীবাণুমুক্ত নকল প্লাস্টিক পিঠা উৎসব এবং সন্ধ্যায় রয়েছে কম্বল মিছিল। শীত ভালোভাবে না আসতেই কেন এত শীতকালীন আয়োজন করা হবে জানতে চাইলে শীতবরণ পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, “মনের শীতই বড় শীত”।

কিছুক্ষন পরেই একদল শীতসন্ন্যাসী যুবক মিছিল দিতে দিতে মলচত্বর এলাকা থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা শীতকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিলো— ‘এই গরমে শান্তি নাই, আমরা সবাই শীত চাই’, ‘ শীত তুমি বেরিয়ে আসো, আমরা আছি আশেপাশে’, ‘শীতে আছে শান্তি, শীতে আছে ভক্তি’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, শীতকাল আমার ঠিকানা’ ইত্যাদি। মিছিলের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল তারা বিভিন্ন হল ও বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রচুর প্যারা যন্ত্রণায় তারা ঠিকমতো খাবার-দাবার, ঘুম, গোসল করতে পারছেন না। জীবন কেমন যেন জড়তা চলে আসছে। নিজেদের সাথে শীতকালের মিল থাকার কারনে তারা সকলে শীতকে আদর্শ মেনে সন্ন্যাস জীবন গ্রহন করার শপথ করেছে। তারা এখন থেকে আর গোসলও করবেনা বলে জানিয়েছেন।

এদিকে শীতের আগমনী খোঁজখবর নিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে যাই। কয়েকজন ছাত্র শীতকালে নিয়মিত পরিপাটি থাকার চেষ্টা করেন জানালেও সর্বশেষ দুইদিনে গোসল দিয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে একজন উত্তর দিলেন, “খেয়াল আসছে না”। খোঁজ পাওয়া গেল আরেকজন বিরল প্রতিভাধর ছাত্রের। তিনি বলেন, “ভাই, আমি একটানা সাতদিন গোসল না দিয়ে রেকর্ড করেছিলাম। মজার ব্যাপার হল আমি প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই রেকর্ড ভাঙতাম”। তিনি আরো জানান যে তিনি আজ নিয়ে টানা তিনদিন গোসল দেননি এবং এবছরও আগের রেকর্ড ভাঙ্গার ব্যাপারে আশাবাদী।

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়