fbpx

মারফির সূত্রঃ If anything can go wrong, it will.

আপনি একটা মিটিং এর জন্য সব প্রস্তুতি ঠিকই নিলেন, তবুও মিটিং এ যেতে আপনার দেরি হয়ে গেলো কোনো একটা বা অনেক কারণে। আপনি জ্যামে বসে আছেন, ভাবলেন বাকি পথটুকু হেঁটে যাবেন। যে-ই না কিছু দূর গিয়েছেন, অমনি বাস আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কিংবা বিরক্তিতে গুগল ম্যাপ দেখে লেন পরিবর্তন করলেন, করার পর দেখা গেলো সেখানেও জ্যাম। আবার ‘কাজের সময় একটা জিনিসও পাওয়া যায় না’- কথাটি কেউ একবারের জন্যও বলেনি এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। এমন ঘটনা আমাদের জীবনে হরহামেশা ঘটে থাকে, কিন্তু এরও ব্যাখ্যা থাকতে পারে তা কি আপনার মনে হয়েছে কখনও? এটা কখনো মনে না হয়ে থাকলে আসুন মারফির সূত্রের সাথে পরিচিত হওয়া যাক-

মারফির সূত্র হলো, “If anything Can go wrong, It will” অর্থাৎ কোনো কিছু ভুল হওয়ার থাকলে, তা অবশ্যই ভুল হবে। কোনো রহস্যময় ক্ষমতা যে মারফির সূত্র এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে তা কিন্তু নয়, বাস্তবে আমরাই একে টিকিয়ে রেখেছি। আমরা সবসময়ই প্রত্যাশা করি যে প্রতিদিনের কাজগুলো যেন আমাদের অনুকূলে থাকে, কিন্তু যখন বাধা বা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়, আমরা এর কারণ খুঁজি। কিন্তু যতক্ষণ সবকিছু ঠিকঠাক চলে আমরা কি একবারও নিজেকে প্রশ্ন করি? একটি পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে অনেকবার হাঁটার পর যদি একবার পিছলে পড়ে যাই, তাহলে আমরা বলি, “শুধু আমার সাথেই কেনো এমন হয়?” অথচ এর আগে এতবার হেঁটে যাওয়া হলো সেই ইতিবাচক দিকটিকে আমরা উপেক্ষা করি।

0203 1

মারফির সূত্র আমাদের ইতিবাচক দিক থেকে সরে নিয়ে গিয়ে নেতিবাচক দিকে ফেলে দেয়। গণিতের সম্ভাবনার সাহায্য নিয়ে বের করে যে যা হবার তা হবেই!

এই নীতিটি প্রায়শই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হয়, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা কিংবা দৈনন্দিন জীবনে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে- সবচেয়ে সুপরিকল্পিত এবং নির্ভুলভাবে করা কাজেও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে বা কোনো কারণে কাজটি নাও হতে পারে। মূলত, মারফির সূত্রটি বুঝায় যে, ‘The universe is unpredictable and we should always be prepared for the worst-case scenario.’

ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড মারফি থেকে এর নামকরণ হলেও এর পূর্বেও অনেক জায়গায় এর উল্লেখ ছিল। জাদুকর এডাম হাল ১৯২৮ সালে  তার একটি প্রবন্ধে লেখেন, কোনো জাদুগিরিতে যেগুলো ভুল হওয়ার সেগুলো ভুল হবেই। এছাড়া ব্রিটেনে এটি Sod’s law নামে পরিচিত।

0203 2

তবে ‘মারফির সূত্র’ আলোচিত করে তোলেন ক্যাপ্টেন মারফি নিজেই। মারফি ছিলেন বিমানবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৪৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মিউরোক (পরবর্তীতে এডওয়ার্ডস নামকরণ করা হয়) এয়ারফোর্স ঘাঁটিতে অফিসাররা একটি পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। পরীক্ষাটি ছিল গ্রাভিটি নিয়ে যে, কোনো পাইলট একেবারে কত অভিকর্ষজ ত্বরণ(g) সামলাতে পারবেন। তাদের ধারণা ছিল, এ পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ভবিষ্যতে প্লেনের ডিজাইনে কাজে আসবে। দলটি Gee Whiz নামক রকেট স্লেড(এমন একটি ডিভাইস যা ভৌত বস্তুর উপর ত্বরণের প্রভাব পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়) ব্যবহার করে বিমান দুর্ঘটনার পরিস্থিতি নকলের চেষ্টা করছিলো। যেদিন মারফির সূত্রের জন্ম, সেদিন নিয়ে কয়েকটি গল্প রয়েছে। তবে সবচেয়ে কাছাকাছি এবং গ্রহণযোগ্য গল্পটি হলোঃ

এডওয়ার্ড মারফিকে কোনো স্লেজ রাইড করতে হয়নি। তখন কিছু সেন্সর তৈরি করা হয় যেগুলোর সাহায্যে সেই গ্রাভিটির ধাক্কা মাপা যায়। সেন্সর লাগিয়ে যখন প্রথম পরীক্ষা করা হলো তখন রিডিং আসলো শূন্য। মারফি চেক করে দেখলেন সবগুলো সেন্সর ভুলভাবে লাগানো। তার সহকারীর উপর এই সেন্সর লাগানোর দায়িত্ব ছিল। তখন মারফি বললেন, “যদি একটি কাজ করার দুটি উপায় থাকে, এবং এক উপায়ে করলে সেটি ভুল হবে, এই লোক অবশ্যই সেই উপায়েই করবে!

0203 3

এরপর এটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৯৭০ দশকে এর উপর একটি বইও লেখা হয়। এরপর থেকে মারফির সূত্রে আরও বিভিন্ন ধারণা যোগ করে একে বর্ধিত করা হয়। মারফির সূত্রের জনপ্রিয়তা লাভ করার পেছনে কারণ হলো, রকেট স্লেজের সেন্সরগুলোর দুটি কানেক্টর ছিল। অর্থাৎ ৫০% সম্ভাবনা ছিল ঠিকভাবে লাগানোর। কিন্তু ভুলকে বড় করে কেন দেখা হলো? সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমরা যাকে বলি, ‘ভাগ্যের পরিহাস’।

‘ভাগ্যে যা লেখা আছে তা-ই হবে, ভাগ্যের কাছে আমাদের সবকিছু ক্ষমতাহীন’ । এই চিন্তাধারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ভাগ্যের লিখনের সাথে সাংঘর্ষিক একটি ব্যাপার হচ্ছে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা। অর্থাৎ আমরা যা-ই করি না কেন, আমাদের প্রতিটি কাজ এবং তার ফলাফল আমরা নিজেরাই বয়ে আনি। এই দুটি ব্যাপারকে যদি আমরা একসাথে জুড়ে দেই, তাহলে মারফির সূত্রের একটি ব্যাখ্যা দাঁড়ায়। এই সূত্র বলে, যা ভুল করার তা আমরা বার বার করবো। আর, মারফির সুত্র এও বলে দেয় যে, আমরা নিজেদের উপর কতটা নিয়ন্ত্রণহীন

মারফির সূত্র কিন্তু কোনো কিছু প্রমাণ করে না। একে একটি সাধারণ মতবাদ বলা যায়। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, কোন খারাপ বা ভুল কিছু যখন ঘটে, তখন প্রকৃতির আরও কিছু বিষয় জড়িত থাকে। রুডিয়ার্ড কিপলিং বলেছিলেন, তুমি যতবারই একটি পাউরুটি ফেল না কেন, মাখন মাখা অংশটি সর্বদা মাটিতে লাগবে।

0203 4

এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, মাখন মাখা অংশটি অপর অংশের চেয়ে সামান্য হলেও ভারি। আমরা যখন উপর থেকে ফেলবো তখন গ্রাভিটির কারণে ভারি অংশটিই কিন্তু নিচের দিকে থাকবে।  তাই শুধু ভাগ্যের উপর ছেড়ে না দিয়ে আমাদের সঠিক কারণটি বের করার চেষ্টা করতে হবে ।

Some of the most well-known corollaries include:

  1. If there is a possibility of several things going wrong, the one that will cause the most damage will be the one to go wrong.
  2. Left to themselves, things tend to go from bad to worse.
  3. If everything seems to be going well, you have obviously overlooked something.
  4. Nature always sides with the hidden flaw.
  5. The chance of the bread falling with the buttered side down is directly proportional to the cost of the carpet.

মরফির সূত্র আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং কাজের সাথে জড়িত, হয়তো আমরা সেটির নাম জানি না। যা কিছু ঘটার তা অবশ্যই ঘটবে সেজন্য আমাদেরকে হতাশ হলে চলবে না। বরং অপ্রত্তাশিত ঘটনা বা দূর্ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এবং সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা বিবেচনায় রেখে যেকোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তাহলে প্রত্যাশিত ফল না পেলেও জীবনে চলার পথ অনেকটাই সহজতর হবে।

0203 5

তথসুত্রঃ

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৯-২০

মো: সাবিত আল-সাবা রিয়ন

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৯-২০