fbpx

যাত্রা কিংবা যাত্রা শুরুর গল্প

-“মামা, বামে যান।“

রিকশাওয়ালা মামা বেশ অবাক হয়ে বললেন, “আপনে না পোস্ট অফিসের গলি যাইবেন?” মৌনতা একটু অনুনয়ের সুরে বললো – “আরেহ হ্যাঁ মামা, এইদিক দিয়েও তো যাওয়া যায়, যান না প্লিজ।“ বিরক্ত হয়ে মামা ডানে রিকশা ঘুরালেন। মৌনতা মনে মনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, এই ডানে ঘুরে যাওয়া রাস্তাটা ধরে গেলে বাসায় যেতে আরো অনেকটা পথ ঘুরতে হয়, অনেকটা সময় বেশি লাগে। এমনিতে বরাবরই বাসায় যাওয়ার বেশ তাড়া থাকে মৌনতার, বিশেষ করে বিকেলের দিকে বাসায় ফিরতে গেলে, কারণ বাসায় সান্ধ্যআইন চালু আছে, যেকোনোভাবেই হোক সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতে হবে। কিন্তু আজ বিকেলে মনে হচ্ছে সব আইন গোল্লায় যাক, যতটুকু সময় ছেলেটার পাশে বসে থাকতে পারা যায়। ওহ হ্যাঁ, এই ছেলের সাথে আজই ওর প্রথম দেখা, কী যে অসাধারণ গান গাইতে পারে ছেলেটা! গানের সূত্র ধরেই মৌনতার সাথে ওর আলাপ, তা প্রায় এক বছর হলো। সারাদিন ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেশ সুন্দর সময় কাটালো ওরা। বাসায় ফেরার সময় হঠাৎই ছেলেটা বলে বসলো, “চলো, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দেই।“ কী ভেবে মৌনতাও রাজি হয়ে গেল। কিন্তু রিকশায় ওঠার পরই শুরু বিপত্তি, ছেলেটা একটার পর একটা গান গেয়েই যাচ্ছে মৌনতার পাশে বসে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকে মৌনতা, ওর জীবনে এত সুন্দর মুহূর্ত আর কক্ষনো আসেনি। তাইতো যেকোনো উপায়ে হোক, অন্তত এক মিনিট সময় বেশি হলেও ছেলেটার পাশে বসে থাকতে চাইছে সে। ছেলেটার গানে ডুবেছিল যেন, হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পেল কারণ বেরসিক রিকশা ওয়ালা মামা বামে রিকশা প্রায় মোড় নিয়ে ফেলছিল, যেদিক দিয়ে মৌনতার বাসা বেশ কাছে। রীতিমত আর্তনাদ করে উঠে মৌনতা, “মামা, মামা, সোজা যান প্লিজ।“ এবার রিকশাওয়ালা মামা অসম্ভব বিরক্ত হয়ে রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, “আপনি আমারে এত ঘুরাইতেসেন কেন?” পাশ থেকে ছেলেটা বেশ দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায় মৌনতার দিকে, মৌনতা মিনমিন করে বলে, “মামা, এমন করতেসেন কেন, এই দিক দিয়েও তো যাওয়া যায়, যায়না বলেন? চলেন চলেন প্লিজ আপনাকে ভাড়া বাড়ায় দিবোনে।“ এই শুনে মামা শান্ত হলেন, আবার রিকশা চালাতে শুরু করলেন। আর পাশ থেকে ছেলেটা সেই দুষ্টুমি ভরা চোখ নিয়ে বললো, “তুমি চাইলে কিন্তু প্রায়ই তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিতে পারি, আজকের মতো রিকশাওয়ালা মামাকে রেহাই দিলেও পারো।“ মৌনতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে ছেলেটার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে হাসতে থাকে, আর ছেলেটা তা দেখে আবার গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করে,

“অমরত্বের প্রত্যাশা নেই নেই কোন দাবি দাওয়া

এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া।“

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়