(১)
শ, ষ আর স – এই তিন অক্ষর ব্যবহার করে আমার প্রতিবেশি রিয়ার পরিচয় তুলে ধরা যায়।
‘স’-তে সুন্দরী। কোথায় যেন পড়েছি, সুন্দরী মেয়েদেরকে তিন ক্যাটেগরিতে ভাগ করা যায়: কিউট, এলেগ্যান্ট আর অ্যাথলেটিক। কিউট মেয়ের বৈশিষ্ট্য হলো কমনীয় মুখ আর নিষ্পাপ, মায়াভরা চোখ। এলেগ্যান্ট মেয়েকে দেখলে আপনার মনে হবে সে পথ ভুল করে এমন সাধারণ জায়গায় চলে এসেছে। আর, অ্যাথলেটিক মেয়ে কেমন, তা আপনি নিজে থেকেই না বুঝলে এই ঘটনা শোনার বয়স হয়নি আপনার।
রিয়া একাধারে কিউট আর অ্যাথলেটিক।
‘ষ’-তে ষোড়শী। মাস দুয়েক আগে রিয়া sweet sixteen অর্থাৎ ১৬তম জন্মদিন উদযাপন করেছে।
‘শ’-তে শয়তান। এলাকার প্রায় সবাই ওকে তাই বলে। আবার, কেউ কেউ বলে শিকারি। তরুণ ছেলেদেরকে শিকার করা ওর নেশা। ওর বাবা ব্যবসায়ী, মা চাকুরিজীবি। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, ছোট ভাই ক্যাডেট কলেজে পড়ে। বাসায় সারাদিন রিয়া ছাড়া শুধু এক বয়স্কা কাজের বুয়া থাকে। তাই, বাসাতেই মেয়েটি তার কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারছে।
অনেকে রিয়াকে বলে গণ-রিয়া। নামটি দিয়েছে আমার আরেক প্রতিবেশি শবনম। এক সময় রিয়ার বান্ধবী ছিলো সে। কিন্তু, তার বয়ফ্রেন্ড দিপু রিয়ার শিকারে পরিণত হবার পর থেকে দুজনের সম্পর্ক সাপে-নেউলে।
ওহ, আপনাকে তো আমার নিজের পরিচয়টাই দেয়া হয়নি। আমি রাকিব। ভার্সিটিতে পড়ি, সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টে। সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের ক্লাস শুরু হয়েছে।
আমাদের তিনতলার ফ্ল্যাটের সামনের ব্যালকনি আর আমার রুমের পশ্চিম পাশের জানালা দিয়ে রিয়াদের ডুপ্লেক্স বাড়িটার ছাদ আর প্রবেশ পথ দেখা যায়। যেটুকু ঘটনা চোখে পড়ে, তাতে বুঝতে পারি গণ-রিয়া নামটি কেন দেয়া হয়েছে।
(২)
ব্যালকনিতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। এখন সন্ধ্যা ছয়টা। রিয়াকে আসতে বলেছি সাতটায়।
রিয়ার বাবা-মা তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা নিলেন। গাড়ি কেন বের করলেন না?
সোয়া ছয়টায় একটি ছেলেকে রিয়াদের বাড়িতে ঢুকতে দেখা গেল। চিনতে পারলাম ছেলেটিকে। নাম মিথুন, রিয়ার সর্বশেষ শিকার। পিছনের গলিতে ওদের বাসা।
তিন-চার মিনিট পরেই মিথুনকে বের হয়ে আসতে দেখে অবাক হলাম। হিসেব মিলছে না। ছেলেটির যদি ইচ্ছে না থাকে, তাহলে এলো কেন? রিয়া ‘না’ বলেছে, এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ছয়টা পঁচিশে রিয়ার মোবাইল থেকে একটি মেসেজ এলো, শুধু ‘Hi’ লেখা। হঠাৎ ও এমন একটা মেসেজ দেয়ায় আমি অবাক হলাম। সাতটায় তো দেখা হবেই, মেসেজ দিতে হলো কেন? তাছাড়া, ও কখনো ‘Hi’ লেখে না, বলেও না। ও লেখে ‘Hola’, বলেও ‘ওলা’ – স্প্যানিশ হ্যালো।
পৌনে সাতটায় শবনমকে আমাদের বিল্ডিং-এর সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলাম। রিয়াদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজাতে দেখে অবাক হলাম। দুজনের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ বলেই জানি। হঠাৎ কী মনে করে?
মিনিট খানেক অপেক্ষা করে ভিতরে ঢুকলো শবনম। একটু পরেই ওকে বের হতে দেখা গেল। দ্রুত পায়ে হেঁটে সে তার বাসায় ফিরে গেল।
সাতটায় একজন ভদ্রমহিলাকে রিয়াদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতে দেখলাম। একবার এদিকে ফিরতেই তাকে চিনতে পারলাম। জিনাত আন্টি। তিনি আসলামের আম্মু, সামনের গলিতে তাদের বাসা। আসলাম রিয়ার সমবয়সী। এখনও মেয়েটির শিকারে পরিণত হয়নি সে। তবে, দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। জিনাত আন্টি নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন। তবে, বাসার ভিতরে ঢুকে দু-তিন মিনিট পরেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলেন তিনি।
সোয়া সাতটা বাজে। রিয়া আসেনি। শরীর খারাপ নিশ্চয়ই, নইলে সে আসতো। আমাকে সে অনেক রেসপেক্ট করে। কিন্তু, একটা কল কেন করলো না?
আমি নিজেই রিয়াকে কল দিলাম। রিং হলো, ধরলো না। ব্যাপারটা ভালো মনে হচ্ছে না। দেরি না করে বাসা থেকে বের হলাম।
কলিং বেল বাজলেও কেউ এলো না। দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে পড়লাম। দোতলায় উঠে রিয়ার বেডরুমে চলে গেলাম।
মেঝেতে পড়ে আছে মেয়েটা। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বেঁচে নেই।
চলে যাবার জন্য ঘুরতেই রিয়ার বাবা-মায়ের মুখোমুখি হলাম। এইমাত্র তারা ফিরেছেন। মেয়ের লাশের দিকে তাকিয়ে দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
(৩)
রিয়ার বাবা আকমল চৌধুরী থানায় হত্যা-মামলা দায়ের করেছেন। মামলার কারণে প্রথমে আমাকে এবং আমার কাছে শুনে মিথুন, শবনম আর জিনাত আন্টিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
টুকরো টুকরো কথা জোড়া দিয়ে যা বুঝেছি, রিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ওর ছোট ভাইয়ের মাফলার। ছোট ভাইকে সন্দেহ করার কিছু নেই, নিশ্চিত হওয়া গেছে সে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজেই আছে, ঢাকায় আসেনি।
হত্যার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সন্ধ্যা ৬:০০টা থেকে ৭:২০। রিয়ার বাবা-মা ৬:০০টায় বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় চড়ে একটা পিঠার দোকানে গেছেন (ড্রাইভার ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে), ৭:২০-এ তারা ফিরে এসেছেন। এ সময় রিয়া ছাড়া বাসায় ছিলো বৃদ্ধা কাজের বুয়া – সে কানে কম শোনে, চোখেও কম দেখে। গায়ে জোর নেই বলে কাজ করতে পারে না, তবুও অনেক দিনের পুরানো বুয়া বলে তাকে বাদ দেয়া হয়নি। একজন ছুটা বুয়া এসে ভারি কাজগুলো করে দিয়ে যায়।
রিয়ার লাশের পাশে পড়ে ছিলো একটা ছোট্ট প্লাস্টিকের কৌটা-ভর্তি ঘুমের ওষুধ। রিয়া যে এই ওষুধ খায়নি, তা বোঝা কঠিন নয়। কৌটাটি কানায় কানায় ভর্তি।
ওর কি ঘুমের ওষুধ খাওয়ার প্ল্যান ছিলো? তার আগেই কেউ তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে?
(৪)
তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই নেহাল। তিনি প্রথমে ডাকলেন মিথুনকে। ছেলেটার সাথে এসআই সাহেবের কথাবার্তা আমরা রুমের বাইরে বেঞ্চে বসেই শুনতে পাচ্ছি। হায় আমার বাংলাদেশ।
প্রাথমিক কথাবার্তার পর তিনি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কখন রিয়াদের বাসায় ঢুকলে?’
‘সোয়া ছয়টায়।’
‘কখন বের হলে?’
‘চার-পাঁচ মিনিট পরে।’
‘এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে গেল?’ খ্যাক খ্যাক করে হাসলেন এসআই সাহেব। ‘চড়ুই পাখি?’
‘রিয়ার মুড অফ ছিলো।’
‘তার মানে সে বেঁচে ছিলো?’
‘হ্যাঁ।’
‘খাজাবাবার দরগা থেকে তো কেউ খালি হাতে ফেরে না।’ খ্যাক খ্যাক করে আবার হাসলেন নেহাল সাহেব। ‘শুধু তোমাকেই খালি হাতে ফিরতে হলো। উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ায় তুমি রাগ করে তাকে মেরে ফেলেছো?’
‘না। তাকে মেরে ফেলার কোনও কারণ ঘটেনি।’
আরও কিছুক্ষণ ছেলেটাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করলেন এসআই সাহেব। এরপর তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে শবনমকে ডাকলেন। নানা কথার পর তিনি আসল কথায় এলেন।
‘তোমার সঙ্গে তো রিয়ার কথাবার্তা বন্ধ ছিলো,’ শবনবকে বললেন তিনি। ‘তুমি কেন হঠাৎ তাদের বাসায় গেলে?’
‘ঝগড়া মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছি,’ বললো শবনম।
‘আমার তো ধারণা ওকে খুন করতে গেছো।’
‘মোটেই না। আমি গিয়ে দেখলাম ওর লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। ভয় পেয়ে দ্রুত ওখান থেকে চলে এলাম।’
‘লাশের পাশে একটা ওষুধের কৌটা দেখেছো?’
‘খেয়াল করিনি,’ বললো শবনম।
‘তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি মিথ্যা বলছো। তার মানে, ঘুমের ওষুধ তুমি নিয়ে গিয়েছিলে?’
‘ন্ নাহ।’
এসআই নেহালের ধমক আর কঠিন জেরার মুখে শবনম স্বীকার করলো, রিয়াকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মারতে চেয়েছিলো সে। তার নতুন বয়ফ্রেন্ড যাতে রিয়ার খপ্পরে না পড়ে। কিন্তু, রিয়ার লাশ দেখে ভয় পেয়ে ওষুধের কৌটা ফেলে পালিয়েছে।
জিনাত আন্টির কাছ থেকে নতুন কিছু জানা গেল না। তিনি রিয়াকে অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন, তার ছেলে আসলামকে যেন রেহাই দেয়া হয়। গিয়ে দেখেন মেয়েটি খুন হয়েছে।
আমার ধারণা, মিথুন খুন করেনি। ও রিয়ার বাসা থেকে বের হয়েছে ৬:২০-এ। ও যদি খুন করে থাকে, রিয়ার মোবাইল থেকে ৬:২৫-এ আমাকে মেসেজ দিলো কে? মোবাইলটা তো মিথুন সাথে নিয়ে যায়নি, লাশের কাছেই পাওয়া গেছে।
আবার, শবনম যেহেতু রিয়ার লাশ দেখেছে, তাহলে জিনাত আন্টি নিশ্চয়ই নির্দোষ। তার মানে, হয় শবনম খুন করেছে, না হলে চতুর্থ কোনও ব্যক্তি।
এসআই সাহেবের ডাকে আমার চিন্তায় ছেদ পড়লো।
(৫)
ঘটনা সম্পর্কে যা জানি, তা বিস্তারিত বললাম এসআই নেহালকে। আমি ৬:২৫-এ রিয়ার যে মেসেজটা পেয়েছি, সেটাও তিনি পড়লেন। আমার সাথে তিনি একমত হলেন, রিয়াকে শবনম বা চতুর্থ কোনও ব্যক্তি খুন করেছে।
‘আমার ধারণা, চতুর্থ ব্যক্তিটা তুমি নিজে,’ বললেন এসআই সাহেব। ‘রিয়া আর শবনমের শারীরিক শক্তি প্রায় সমান। শবনমের পক্ষে রিয়াকে এভাবে খুন করা কঠিন। আমার ধারণা, তুমি ৬:২০ থেকে ৬:৪৫ – এই সময়ের মধ্যে এসে রিয়াকে খুন করেছো। পরে সোয়া সাতটায় আবার এসেছো।’
‘সিসি ক্যামেরার রেকর্ড চেক করে দেখুন,’ বললাম আমি।
‘হতে পারে প্রথমবার তুমি পিছনের ছোট গেটটা দিয়ে ঢুকেছো। ওখানকার সিসি ক্যামেরাটা কাজ করছে না। আর, রিয়া বাসার ভিতরের সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো করে রাখতো। আচ্ছা, তুমি কেন রিয়াকে তোমার সাথে দেখা করতে বলেছো?’
‘আমি এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না।’
‘কেন, লজ্জা লাগছে? অন্যরা রিয়ার সার্ভিস নিতে ওর বাসায় চলে যেতো। আর তোমার বেলায় ফ্রি হোম ডেলিভারি!’ আবার খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলেন এসআই নেহাল।
আমার পিত্তি জ্বলে গেল। মুখে কিছু বললাম না। তবে, সিদ্ধান্ত নিলাম বিসিএস দিয়ে এএসপি হবো। এই লোকটাকে আমার আন্ডারে নিয়ে আসবো। যতবার খ্যাক খ্যাক করে হাসবে, প্রতিবার কষে একটা করে চড় দিবো।
‘রিয়াকে কেন দেখা করতে বলেছো, তা না বললে তোমাকে সন্দেহ করাটাই স্বাভাবিক, তাই না?’
বাধ্য হয়ে তাকে ব্যাখ্যা করলাম, ‘আমি ইন্টারনেট সার্চ করে বুঝতে পেরেছি, রিয়া মানসিক সমস্যায় ভুগছিলো। নিম্ফোম্যানিয়া। নানা কারণে এটা হয়। প্রধান কারণ অক্সিটোসিন হরমোন, ডিপ্রেশন আর দুশ্চিন্তা। ওর কার্যকলাপে সবাই ওকে খারাপ মেয়ে ভেবেছে, ওকে নিয়ে রসালো গল্প করেছে – কিন্তু, ওর আচরণ ছিলো নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওর দরকার ছিলো অ্যান্টি-অক্সিটোসিন মেডিসিন আর সাইকোথেরাপি। আমি ওকে ডেকেছিলাম ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে, চিকিৎসার পরামর্শ দিতে।’
বিব্রত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন এসআই সাহেব। তার আচরণ পুরোপুরি বদলে গেল। বললেন, ‘স্যরি, সবাইকে এক রকম মনে করাটা আমার ঠিক হয়নি।’
Knowledge is power.
‘আপনার কী দোষ?’ বললাম আমি, ‘প্রায় সবাই এমনই মনে করে।’ এসআই সাহেবকে এখন আর অসহ্য লাগছে না।
‘তুমি যেতে পারো। দরকার হলে খবর দিবো। মিথুন আর মিসেস জিনাতকেও ছেড়ে দিচ্ছি। তবে, চতুর্থ লোকটার খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত শবনমকে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। সে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে রিয়াদের বাসায় গেছে।’
(৬)
মিথুনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে থানার বাইরে এলাম। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
‘স্যরি রাকিব ভাইয়া,’ বললো মিথুন, ‘রিয়া যে অসুস্থ তা আমি বুঝতে পারিনি। আসলে ওকে সবাই ভুল বুঝেছে। দিপু যে শবনমের বয়ফ্রেন্ড, তা রিয়া জানতো না। শবনম তো কাউকেই বলেনি, রিয়া জানবে কেমন করে? অথচ, রিয়াকে সে দোষারোপ করলো!’
আমি কিছু বললাম না।
‘জানো ভাইয়া, রিয়া ওর মাকে ছাড়া একমাত্র তোমাকে সম্মান করতো। গতকাল আমি যখন ওদের বাসায় গেলাম, ও বললো, একটু পরে রাকিব ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবো, আজ অন্য কিছু না।’
আমার মনে হলো, রিয়াকে সুস্থ করতে প্রতিষ্ঠিত সাইকোলজিস্ট দরকার হতো না। আমি সাইকোথেরাপি দিলেই হয়তো কাজ হতো।
‘মেয়েটার মনে অনেক কষ্ট ছিলো,’ বলে যাচ্ছে মিথুন। ‘হিরন আংকেলকে তো বাবা বলেই ডাকতো না সে – ’
‘হিরন আংকেল মানে?’ অবাক হয়ে বললাম আমি। ‘ওর বাবার নাম আকমল না?’
‘ভাল নাম আকমল চৌধুরী। কিন্তু, ডাক নাম তো হিরন। বাইরের কেউ জানে না। রিয়ার আম্মুই শুধু হিরন ডাকতো।’
আমি চমকে উঠলাম। ‘দাঁড়া,’ বলে প্রায় দৌড়ে আবার থানায় ঢুকলাম। এসআই নেহাল পাশের রুমে ছিলেন। আমাকে দেখে বের হয়ে এলেন।
‘রিয়ার বাবাই চতুর্থ ব্যক্তি,’ উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম আমি, ‘সে-ই রিয়াকে খুন করেছে।’
এসআই নেহাল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি সিরিয়াস, এটা বুঝতে পেরে আমাকে নিয়ে তার অফিসে বসালেন।
তাকে ব্যাখ্যা করলাম, রিয়ার বাবার ডাক নাম হিরন। রিয়া তাকে অপছন্দ করতো, বাবা ডাকতো না। আমাকে রিয়া ‘Hi’ লিখে পাঠিয়েছে, কিন্তু সে কখনও ‘Hi’ লিখতো না, বলতোও না। রিয়া আসলে লিখতে চেয়েছে ‘Hiron’, কিন্তু শেষ করতে পারেনি। তার আগেই ওর বাবা ওর শ্বাসরোধ করেছে।
‘কিন্তু কেন?’ জানতে চাইলেন এসআই নেহাল।
‘আমার ধারণা, এটা অনার কিলিং। আংকেল ভেবেছেন রিয়ার কারণে তার মান-সম্মান শেষ হয়ে যাচ্ছে, তিনি সমাজে হাসির পাত্র হচ্ছেন। হয়তো ভেবেছেন রিয়া কখনও ঠিক হবে না। আরও কারণ থাকতে পারে। পিঠার দোকান থেকে এসে পিছনের ছোট গেটটা দিয়ে ঢুকে মেয়েকে খুন করে আবার তিনি পিঠার দোকানে ফিরে গেছেন। আন্টিকে হয়তো বলেছেন, “পুলিশ অনর্থক আমাদেরকে সন্দেহ করতে পারে। তুমি বলবে আমরা পুরো সময়টা একসাথে ছিলাম।” আন্টিকে জেরা করলে –’
‘পাঁচ মিনিট লাগবে সত্যি কথা বের করতে,’ বললেন এসআই নেহাল।
(৭)
গলির মুখে রিকশা থেকে নেমে ধীর পায়ে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি। রিয়ার অকালমৃত্যুর কথা মন থেকে দূর করতে পারছি না। মানসিক রোগটা ছাড়া মেয়েটি সব দিক দিয়ে ভালো ছিলো।
আমরা অনেক উন্নতি করছি, পদ্মা সেতু বানাচ্ছি, মেট্রোরেল চালু করছি – কিন্তু, এদেশের মানুষ এখনও মানসিক রোগে কী করণীয়, তা জানে না। পাগল পিটিয়ে সোজা করতে চায়।
রিয়াদের বাসার সামনে আসতেই মনে পড়লো, সপ্তাহ খানেক আগে মেয়েটি আমাকে বলেছিলো, ‘তুমি খুব ভালো ছেলে, রাকিব ভাইয়া। যদি ….. থাক, পরে বলবো।’
(শেষ)
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪
- জাফর আহমেদ খানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১, ২০১৫
- জাফর আহমেদ খানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১, ২০১৫
- জাফর আহমেদ খানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8/বুধবার, জুলাই ১, ২০১৫
- জাফর আহমেদ খানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8/বুধবার, জুলাই ১, ২০১৫
- জাফর আহমেদ খানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8/বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৯