fbpx

এক ঝরা পাতার গল্প

এক ঝরা পাতার গল্প

কোনো এক শীতের পড়ন্ত বিকেলে বসেছিলাম এক গাছের নিচে, কথা বলছিলাম, এই আমার কাল হলো!!

আমি: তোমার জীবন কত সুন্দর, ফল-ফুলের সাথে সখ্যতায় কাটাও জীবন। তারা ছেড়ে গেলেও ঢের থাকো তুমি পাতা। বাঁচার স্বাধীনতা অনেক তোমার।

হঠাৎই ..

পাতা: স্বাধীনতা!!! হা.হা.হা..। সময় ঘনিয়ে একদম শেষের দিকে দাঁড়ানো। আজ আছি তো কাল নেই। আমার ছেড়ে যাওয়া কে আর মনে রাখে বা রাখবে?

আমি: এমন অভিমানী সুরে বলছো কেন? কি হয়েছে? জীবনে তো আসলেই কিছু দেখো নি তুমি, আমাদের জীবন দেখলে বুঝতে; যদি, কিন্তু, হয়তো-তে আটকে থাকি। সবার মাঝেই অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজেকে জাহির করার প্রতিযোগিতা। দেখেছো কখনো কষ্ট পেতে পেতে সয়ে নেওয়া?

পাতা: অভিমান মনে হচ্ছে? আমার সময় খুব কম;

আমার ঝরে পরার আগে এমন কথার কারণ শোনো তবে..

আমার শুরুটা কোনো এক বসন্তে। লাল নীল ফুলের সাথে আমার বেড়ে উঠা। সময়ের সাথে তাদের আগলে রাখার দীক্ষা নেওয়া। না না..আমি লাল নীল রঙের কিছু নই। আমি সবুজ। কেন এই রঙের প্রশ্ন করছো? ছোটো বাচ্চাদের পড়তে শুনেছি, গাছে নাকি ক্লোরোফিল নামের এক উপাদান থাকে। তার সাথে নাকি সূর্যের আলোর বিক্রিয়া করে, তাই আমার রঙ হয় সবুজ। এ তো কেবল উদ্ভিদবিদ্যার কথা শুনলে। এখন শুনো পদার্থবিজ্ঞানের কথা, সূর্য থেকে যে রঙবিহীন আলো আসে তাকে প্রিজমের মাঝ দিয়ে পাঠালে সাতটি রঙে ভাগ হয়। ঐ বলো যে, “বেনীআসহকলা”। এই সাতটি রঙের মাঝে সবুজ বাদে বাকি রঙগুলো নাকি শোষণ করে নেই, শুধু সবুজ রঙটাই ফিরিয়ে দেই; তোমাদের ভাষায় প্রতিফলন, যার জন্য আমাকে তোমরা সবুজ দেখো। বুঝলে তো?

আমি: বাহ্! তুমি তো ভালোই পড়াশোনা জানো। আমরা চাই এসব থেকে মুক্তি; আর তুমি পড় এসব। ভালো!!!

পাতা: হা.হা.হা.. কেউ সাথে না থাকলে কিছু করে তো নিজেকে বাচাঁতে হবে। তাই না?

আমি: তাই বলে পড়াশোনা!!!! আচ্ছা বাদ দাও। পরে বলো..

পাতা: বসন্তে কোকিলের কুহুতানে ফল-ফুলের স্বতঃস্ফূর্ত বেড়ে উঠায় আমিও তাদের সঙ্গী। একসাথে সকালে আলোর ঝলমলানিতে জেগে উঠা; আবার সূর্য্যি মামার বিদায়ে ঘুমিয়ে পরা। চলছিল সব ভালোই, হঠাৎই বসন্তের কোনো একদিন প্রথম খেয়াল করলাম, সবাই ফুলকে দেখে বলছো, “কি সুন্দর রঙ, কত মনোরম!” কিন্তু আমায় কেউ কিছু বলছো না।

জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কেন আমায় কিছু বলছো না? এ কেমন অবিচার? “

শুনছিলো না; আসলে এড়িয়ে যাচ্ছিলো। পরে বুঝালাম নিজেকে, তোমরা মানুষদের প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে আয়ত্তে না থাকলে মুখ খোলো না। এভাবেই অভ্যস্ত করে নিলাম নিজেকে।

আমি: আরে না। ওমন কিছু না।

পাতা: ওমনই কিছু নয়? এখন উত্তর দাও।

আমি শান্ত হয়ে রইলাম।

পাতা: দেখলে তো… আরও শোনো..এরপর আবার গ্রীষ্মের শেষে দেখি তোমরা মানুষেরা বলছো, পাকে নি কিংবা এ গাছের ফল মিষ্টি।

কখনো তো বললে না, “কি সুন্দর পাতা!” ওহ! বলি নি তো। ফল-ফুলের বেড়ে উঠা যেন স্বতঃস্ফূর্ত হয় তাই তোমরা গাছের ছাটাই বলে আমার বন্ধুদের কেটে ফেলে দাও। জীবন কী শুধু তোমাদেরই আছে?

আমি: আরে ওটায় ফলন ভালো হয়, তাই কেটে ফেলা হয়।

পাতা: তাই বলে এমন উপড়ে ফেলে এরপর আগুন দিয়ে দিবে? যেন আর ফিরতেই না পারে!

আমি: তোমার কথাগুলো আমদের জীবনের সাথে মিলে যাচ্ছে তোমার মতো আমারও অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই।

আমার কথা যেন কানেই তুললো না, এমনভাবে আবার বলতে শুরু করলো..

পাতা: কালবৈশাখে কীভাব যেন আগলে রাখতে শিখে গেলাম পুরোপুরি।

আমি: কীভাবে?

পাতা: মান-অভিমানে সরে আসছিলাম সবার থেকে। নিজেকে সামলে রাখছিলাম হঠাৎই পাশে তাকিয়ে দেখি ফল-ফুল পারছে না দমকা হাওয়ার সাথে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। হলাম ওদের ঢাল, একসাথে সব ঝড়ের মোকাবিলা করলাম। ঝড়ের শেষে তোমরা সবাই খবর নিলে ফল-ফুলের; ঠিক আছে কিনা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে না তো, আমি ঠিক আছি কিনা! মেনে নিলাম আবারও। বর্ষায়ও ঢাল হলাম; খবর কেউ রাখলে না।

আমি নির্বাক হয়ে শুনছিলাম।

পাতা: আস্তে আস্তে ক্লান্ত হলাম হেমন্তে। কিছুই যেন ভালো লাগে না। তবুও কাউকে একা ছাড়ি নি। ঝড়-ঝাপটায় ঢাল হয়ে দাঁড়াই। এই করে আজ শীতে আমি। সবাই করুণা দেখাচ্ছো। আমার নাকি বয়স হয়েছে। নবীনের জন্য ছাড়তে হবে জায়গা।

তোমাদের যখন বললাম, “তা ঠিক, সবুজ থেকে হলুদ হয়ে যাচ্ছি। যেতে তো হবেই কিন্তু আমি চলে গেলে যে নবীন আসবে তাকেও কি তোমরা এমন কষ্টই দিবে? ” সবাই চুপ করে রইলে তোমরা। আমার কাছে খুব একটা সময় নেই বলে কি প্রশ্নের উত্তর দেয়া বারণ? নাকি আমি কিছু বলার যোগ্যই না?

আমি: সব দোষ কি আমাদের? কখনো আমাদের বুঝতে চেয়েছিলে কি তোমরা? তোমার মতো আমাদের জীবনেও আছে সুর-তাল-লয়ের উলট-পালট..

পাতা: দেখলে তো; সেই নিজেদের কথাই ভাবছো। জীবন আছে, উঠা-পরা থাকবে তা শিখেছি ঢের।

আমি: তা কি শিখলে? আমাকেও শেখাও..

পাতা: সবাই তোমাকে নিয়ে ভাববে; এ পুরোটাই সেগুড়ে বালি। তুমি কাউকে নিয়ে ভাবলে সেটা তোমার বিষয়। তোমাকে নিয়েও কেউ ভাবাবে এটা একদম না। কেউ ভাবলেও তুমি তাকে নিয়ে যেভাবে ভাবো সেভাবে সে তোমায় নিয়ে ভাববে তা পুরোটাই দুরাশা।

আমি: তাই?

পাতা: জ্বী, নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তোলো। সত্যিতে তোমাদের জীবনের সারাংশই হলো আমার জীবন। শিখো..

বলতে বলতেই ঝরে পড়ল পাতা। আমি ভাবছি, “সত্যিই কি জীবনের সারাংশ তবে এই? ..”

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১ম বর্ষ

নুঝাত নাজিয়া

১ম বর্ষ