স্বপ্নের মেট্রোরেল
ধারণা করা হয়, আদিমকালে জীব-জন্তুদের পায়ের ছাপ অনুসরণ করেই রাস্তার সৃষ্টি। ধীরে ধীরে সভ্যতার যুদ্ধে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে মানুষ একসময় গৃহপালিত পশু (গাধা, ঘোড়া,ষাঁড়) দিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে জিনিসপত্র নিয়ে যেত। মেসোপটেমিয়া যুগে (৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) চাকা আবিষ্কারের পর চাকার ঠেলাগাড়ির সাথে ঘোড়া, উট, ষাঁড়, মহিষ, গরু-বলদকে জুড়ে তৈরি হলো জুড়িগাড়ি।
বিজ্ঞানের হাত ধরে ১৮১১সালে ইংল্যান্ডের টেলফোর্ড ও ম্যাকডমের পাথরকুঁচি দিয়ে রাস্তা তৈরির কৌশল আবিষ্কার আবার ১৮১৪ সালে জর্জ স্টিফেনসনের বাষ্প চালিত রেল ইঞ্জিন তৈরি। এমনই সময়ের পরিক্রমায় সৃষ্টি হয়েছে নানা যানবাহনের। উন্নত হয়েছে পথ-ঘাট। উন্নয়নের এই যুদ্ধে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পিছিয়ে নেই সদ্য উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশও।
প্রথম বিশ্বের দেশগুলো যখন নিজস্ব বিমানে যাতায়াতের ভাবনায় নিমত্ত ঠিক তখনই বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোরেল যেন পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ধরা দিল দেশের জনগণের কাছে।
ঢাকা মেট্রোরেল, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। যদিও ১৮৬৩ সালে লন্ডনের প্যাডিংটন থেকে ফারিংডন পর্যন্ত ছয় দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেমে কিলোমিটার বিশেষ রেলপথ চালু হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মেট্রোরেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০১৩ সালে জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যার অধীনে প্রথমবারের মত ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ঢাকায় নির্মিতব্য মেট্রো রেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬-কে নির্বাচন করা হয় যার মাঝে ২২ডিসেম্বর, ২০২২ সালে এমআরটি লাইন-৬ এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকায় মেট্রোরেল আংশিক চালু হয় এবং তিনি মেট্রোরেলের প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রার অংশ ছিলেন। ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। ০৭ জুলাই, ২০২৩ আগারগাঁও থেকে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত প্রথম ট্রায়াল হয় যার মাধ্যমে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডও হয়ে যায় দেশের উন্নয়নের স্বাক্ষী।
১ম বর্ষ