fbpx

সম্পাদকীয় – জুলাই ২০২০

প্রিয় পাঠক, শতবর্ষে পা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সবাইকে শুভেচ্ছা।

আসুন প্রায় একশ’ বছর আগের একটা মজার ঘটনা জানতে চেষ্টা করি।

নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হতে এসেছে একুশ বছরের মেয়ে লীলা নাগ। ইংলিশে এম.এ. পড়তে চায় সে। সিলেটের মেয়ে লীলা কলিকাতার বেথুন কলেজ থেকে ইংলিশে বি.এ. পাশ করেছে, পেয়েছে পদ্মাবতী স্বর্ণপদক।

তাকে ভর্তি করা হচ্ছে না।

বিপ্লবী টাইপের মেয়ে লীলার সাথে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের ‘হেড’-এর আলোচনা কল্পনা করা যাক:

‘কেন ভর্তি করবেন না, স্যার? আমার রেজাল্ট কি খারাপ?’

‘মোটেই না। তোমার রেজাল্ট তো খুব ভালো। কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শুধু ছেলেরা পড়বে।’

‘স্যার, কোথাও কি লেখা আছে মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে না?’

‘তা বোধ হয় নেই। কিন্তু, ৮৪৭ জন ছাত্রের মধ্যে ১ জন ছাত্রী চলবে কীভাবে?’

‘কেন, স্যার? ওরা কি আমাকে দল বেধে আক্রমণ করবে?’

‘ন্-ন্-না। কিন্তু, মেয়েদের তো কোনও হল নেই।’ তখন হল ছিলো দু’টো: ঢাকা হল (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) আর জগন্নাথ হল।

‘স্যার, আমি তো বাসায় থাকবো।’

‘কিন্তু, কোনও হলে তো তোমাকে অ্যাটাচ করতে হবে, তাই না?’

‘যে কোনও হলে অ্যাটাচ করে দেন, স্যার। আমি তো সেখানে থাকতে যাবো না।’

‘আচ্ছা, তুমি ভি.সি. স্যারের সাথে দেখা করো।’

স্যার পি.জে. হার্টগ (ভি.সি.) বিশেষ বিবেচনায় লীলা নাগকে ভর্তির অনুমতি দিলেন।

রচিত হলো ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর পূর্ববঙ্গ এক ধাপ এগিয়ে গেল।

সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাবনতির কাহিনী সবার জানা। বাংলা ট্রিবিউনের কলামিস্ট তপন মাহমুদের ভাষায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে ছিলো ‘পরাধীন দেশের স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯৭১-এর পর হলো ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়’। এখন হয়েছে ‘স্বাধীন দেশের পরাধীন বিশ্ববিদ্যালয়’।

সমস্যার কারণ ‘রাজনীতি’ নয়, ‘ব্যক্তিনীতি’। ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনৈতিক সচেতনতা আর লেখাপড়া ঠিক রেখে গঠনমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দোষের হবে কেন? কিন্তু, সব আমলেই দলবাজ আর তেলবাজরা প্রতিষ্ঠানটিকে খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।

প্রাণপ্রিয় এই বিশ্ববিদ্যালয় আবার গৌরবে উজ্জ্বল হোক, এই কামনা করছি।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

জাফর আহমেদ খান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪